জলবাহিত রােগ কলেরা সম্বন্ধে আলোচনা ও ধারণা

 জলবাহিত রােগ  সম্বন্ধে কিছু আলোচনা ও ধারণা

আসলে ওপরের ছবিগুলােতে যেসব খাদ্য বা পানীয়ের কথা বলা হয়েছে , তাদের প্রধান উপাদান হলাে জল । অনেকসময় ওইসব খাদ্য বা পানীয় তৈরি করতে বিশুদ্ধ পানীয় জল ব্যবহার করা হয় না । আর ওই দূষিত জল থেকেই আমাদের শরীরে ঢুকতে পারে কলেরা , টাইফয়েডের মতাে বিভিন্ন রােগের জীবাণু । তার ফলে আমরা অসুস্থ হয়ে পড়তে পারি ।

কলেরা রােগের ইতিহাস 

বিসূচিকা বা কলেরা রােগের সঙ্গে ভারতের পরিচয় প্রায় 2500 বছরের। 

2010 সালেও সারা পৃথিবীতে কলেরার শিকার হয়েছিল প্রায় 1,00,000 - 1,30,000 মানুষ । আর । প্রায় 30-50 লক্ষ মানুষ এই রােগে আক্রান্ত হয়েছিল । 

বাংলায় 1817 সালে কলেরা মহামারি দেখা । দেয় । বঙ্গোপসাগরে চলাচল করা ব্রিটিশ জাহাজের মাধ্যমে বাংলা থেকে ভারতের অন্যান্য রাজ্যে পৌছে যায় এই মহামারি । তারপর এই মহামারি সেখান থেকে পারস্য , মধ্য এশিয়া , দক্ষিণ - পূর্ব এশিয়া হয়ে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে পৌছে যায় ।

1827 সালে ভারতের গাঙ্গেয় উপত্যকা , কলকাতা আর তার আশপাশের অঞ্চল থেকে দ্বিতীয় কলেরা মহামারির সূচনা । এরপর এই মহামারি গঙ্গার উজান বেয়ে লাহাের আর পাঞ্জাবে পৌছে যায় । সেখান থেকে উটের ক্যারাভানের পথ ধরে কাবুল , আফগানিস্তান , বুখারা হয়ে রাশিয়ায় ছড়িয়ে যায় এই মহামারি । 1835 সালের মধ্যে এই মহামারি আমেরিকা আর ইউরােপে পৌছে যায় । 

1900 থেকে 1920 সালের মধ্যে এই রােগে ভারতে আনুমানিক ৪০ লক্ষ লােকের মৃত্যু হয়েছিল । 

কলেরায় আক্রান্ত ব্যক্তির বারেবারে বমি । আর মলত্যাগ । মলের রং চাল ধােয়া জালের মতাে । মলে কোনাে দুর্গন্ধ থাকে না

রােগীর শরীর থেকে দিনে 10-11 লিটারের মতাে জল ( আর নুন ) বেরিয়ে যায় । শরীর থেকে এতটা জল আর নুন বেরিয়ে যাওয়ার জন্য হাত পায়েসূঁচ ফোটানাের মতাে অনুভূতি হয় - এর থেকেই বিসূচিকা - র সূচিক কথাটার উৎপত্তি । 

কলেরা রােগ আর কলেরা রােগী 

এই রােগে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি শিশু । আর বয়স্কদের , যাদের শরীর এই অতিরিক্ত জল বেরিয়ে যাওয়ার ধকলটা নিতে পারে না ।

বমি , পায়খানা , জল - তেষ্টা , পেটব্যথা , অবসন্ন বােধ করা , পায়ের চামড়ার শিথিলতা বা চামড়া কুঁচকে যাওয়া , রােগীর ক্রমশ নিস্তেজ হয়ে পড়া , জ্ঞান হারানাে আর সবশেষে মৃত্যু । পুরাে ব্যাপারটা ঘটতে সময় লাগে খুবই অল্প – কখনও বা মাত্রই 24-48 ঘন্টা ।

Previous
Next Post »