গাছ ও পরিবেশের সম্পর্কে কিছু তথ্য

 গাছ ও পরিবেশের সম্পর্কে কিছু তথ্য

গাছ ও জলচক্র 

সিধু বইতে আমাজন , মালয়েশিয়া , কেরলের সাইলেন্ট ভ্যালি আর আফ্রিকার বর্ষা অরণ্যের কথা পড়ছিল । গাছ থেকে এত জল বাষ্পীভূত হয় যে এসব অরণ্যে সারা বছরই নাকি বৃষ্টি হয় । অরণ্যের গাছপালার ঘন আবরণ জলীয় বাষ্পকে উবে যেতে দেয় না । সেই বাষ্প ঘন হয়ে জমে ফোঁটা ফোঁটা জল হয়ে মাটিতে পড়ে । তারপর চুইয়ে চুইয়ে মিশে জলের সোঁতা তৈরি করে । সোঁতাগুলাে মিলতে মিলতে একসময় নদীর জন্ম হয় । বর্ষার জলও নানা ঢাল বেয়ে নেমে একসঙ্গে মিলে নদীর জন্ম দেয় । হিমালয়ের বরফগলা জলে জন্ম নেওয়া নদীরা বাদে ভারতবর্ষের আর সব নদীর - ই জন্ম কিন্তু এভাবে । পর্বতের ঢাল যদি অরণ্যের ছায়ায় ঢাকা । থাকে তাহলে সেই জলও তাড়াতাড়ি উবে যায় বাষ্প হয়ে । জলকে বাষ্প হতে না দিয়ে মাটির ছিদ্র দিয়ে চুইয়ে চুইয়ে মাটির তলায় ওই জলকে জমতে সাহায্য করে অরণ্য । কুয়াে খুঁড়ে বা টিউবওয়েল বসিয়ে আমরা সেই জল পাই । জঙ্গলে যদি লম্বা আর বড়াে পাতাযুক্ত গাছ বেশি থাকে , তবে বৃষ্টির সম্ভাবনা বাড়ে , জল । বিশুদ্ধ থাকে এবং জলের প্রবাহও নিয়ন্ত্রিত হয় । 

গাছ ও পরিবেশের তাপমাত্রা 

স্কুলে যাওয়ার পথে মৌমিতারা গরমের দিনে কিছুক্ষণ বট গাছটার নীচে দাঁড়ায় । ডালপালা ও পাতার ছাউনি দিয়ে ছাতার মতাে কাজ করে ওই গাছটা । গাছের নীচে মাটিতে পা রাখলে ওরা বুঝতে পারে মাটি কত ঠান্ডা । আমবাগানের আম পাহারা দিতে দিতে রহিমদের মাঝে মাঝে আরামে ঘুম চলে আসে । একটা বড়াে আমগাছ জল বাষ্প করে বাতাসে ছেড়ে দেয় । জল বাষ্প করতে উদ্ভিদদেহ থেকে তাপ শােষিত হয় । এরফলে । আশেপাশের পরিবেশও ঠান্ডা হয়ে যায় । 

গাছ ও ঝড়ের গতিবেগ 

কয়েকবছরআগে‘আয়লা’নামক একসামুদ্রিকঝড় ধেয়ে এসেছিল । পশ্চিমবঙ্গের দিকে । এরকম ঝড়ের মধ্যেই রফিক , নিরঞ্জনদের বাবা - কাকারা মাঝেমধ্যেই যায় সুন্দরবনে মাছ ধরতে । ওর মুখে একথা শুনে স্যার হেসেবললেন - এতপ্রবল ঝড়েও দ্বীপগুলাের তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয় না । বাদাবনের গরান , হেঁতালের দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে বাতাসের বেগ কমে যায় । এভাবেই তাে শত শত বছর ধরে বাদাবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্য ঝড়ের বেগ ঘাট থেকে আশি শতাংশ কমিয়ে দেয় । যেসব দেশে সমুদ্রের উপকূলবর্তী অঞ্চলের বন এত গভীর বা ঘন হয় না , সেখানে নাকি প্রায়ই এরকম ঝড় - ঝঞ্জা হয় । প্রচুর লােক মারা যায় । বাড়িঘরের ক্ষয় - ক্ষতি হয় ।

গাছ ও পরিবেশ দূষণ 

গরমকালে আমগাছগুলােকে দেখলে ইতুর মায়া হয় । কেমন ধুলােয় ভরা । স্যার ইতুর কথা শুনে বললেন = এত রাসায়নিক পদার্থ , আর গ্যাস বাতাসকে ক্রমাগত দূষিত করছে । আর এই দূষণ থেকেই তাে মানুষের এত বােগ । ইতু শুনে বলল – তাহলে আমাদের সামনে খুব বিপদ । স্যার শুনে বললেন— কদম , বেল , শিরীষের মতাে গাছের পাতা এইসব কণাকে ছাঁকনির মতাে আটকে রাখে । ইতুর এবার জানার ইচ্ছে হলাে – কোন ধরনের গাছরা ধুলিকণা আটকাতে পারে ? - যেসব গাছের পাতা চওড়া ও লম্বাটে ধরনের তারা বেশি দূষক পদার্থ ধারণ করতে । পারে । এরকম তিনটি গাছ হলাে  1.বট  2.আম 3. অশ্বথ ।  এছাড়াও রাস্তার ধারে চলার সময়ে তুমি লক্ষ করবে কোন কোন গাছের পাতা ওই ধরনের । আবার যে সব গাছে যৌগিক পাতা দেখা যায় তারাও ধোঁয়ার বিভিন্ন গ্যাস শুষে নেয় , ধুলােগুলাে পাতার ওপর জমতে থাকে । 

গাছ ও মাটির ক্ষয় 

কিছুদিন ধরেই অম্লান লক্ষ করছে নদীর জল ক্রমশ বাড়ছে । ও জানে এই অল্প বৃষ্টিতেই যদি জল এমন বাড়ে তবে সামনে ভরাবৃষ্টির মরশুমে আবার বন্যা হবে । দুর্গতির সীমা থাকবে না । কেন এমন হয় ? – মাটির ওপর যদি ঘাসের মােটা চাদর না থাকে । স্যারের উত্তর শুনে অম্লান কিছুক্ষণ ভাবল । গােরুগুলাে যখন ওরকম ঘাসশূন্য মাটিতে চরে , তখন ওদের খুরের ঘষায় মাটির চাঙড় উঠে যায় । –এর ফলে দুটো ক্ষতি হয় : ( 6 ) জলেভেজা মাটির স্তর ওপরে উঠে আসে । এই জল সূর্যের আলাের প্রভাবে বাষ্প হয়ে গেলে মাটির কণা আরও আলগা হয়ে যায় । ( i ) বৃষ্টির জল মাটিতে পড়লেই আলগা মাটি ধুয়ে নদীতে চলে যায় । নদীর গর্ভে যদি এভাবে ক্রমশ পলি জমতে থাকে তবে নদীর জলধারণ ক্ষমতা কমতে থাকে । সামান্য বৃষ্টিতেই দু - কূল উপচে জল চলে আসে বসতি এলাকায় । এজন্য আগে যেসব অঞ্চলে বন্যা হতাে না , আজকাল সেখানেও বন্যা হচ্ছে । আর ওপরের মাটির সঙ্গে পুষ্টিও ধুয়ে চলে যাওয়ায় মাটিও উর্বরতা হারাচ্ছে।কোন ধরনের গাছ মাটিতে পুঁতলে এ ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়ানাে যেতে পারে বলে তােমাদের মনে হয় ? ..........। 

গাছ ও জীবের আশ্রয়স্থল 

তােমার বাড়ির পাশে যদি কোনাে আম / বট / অশ্বত্থা / শিমুল / তেঁতুল বা অন্য কোনাে বড়াে গাছ থাকে তবে ভালােভাবে লক্ষ করে দেখাে তাে গাছে কোন কোন প্রাণী বাস করে । 1. পােকামাকড় 3. স্তন্যপায়ী - 2. পাখি - 4. সরীসৃপ -


গাছ ও শব্দদূষণ

আজ কদিন ধরে যাত্রার প্রচার উপলক্ষ্যে মাইকটা দিনরাত বেজে চলেছে । কবীরের কান ঝালাপালা । বুকটাও কেমন ধড়ফড় করছে । ও বুঝতে পারছেনা রাতে শােয়ার অনেকক্ষণ পরেও ঘুমটা কেন আসছেনা।শব্দ এভাবেই নাকি আমাদের জীবনকে বিপর্যস্ত করছে । গাছ শব্দের এই তীব্রতাকে কোনােভাবে কমাতে পারে কী ? শব্দকে জব্দ করতে পারে বেল , ছাতিমও জারুলের মতাে গাছ । বনের গভীরতা যত বাড়ে শব্দের প্রাবল্য তত কমে । শব্দের প্রাবল্য কমানাের জন্য তুমি অরণ্য সপ্তাহে ’ কোথায় কোথায় গাছ পুঁতবে - 1. যানবাহন চলাচলের পথের দুপাশে পরিবেশ দিবস পালন উপলক্ষ্যে পীযুষরা গাছের এত উপকারের কথা জানতে পেরে অবাক হয়ে গেল । পরিবেশবিদ প্রধান অতিথি বললেন সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্য পরিবেশের সবরকম জৈব ও অজৈব উপাদানের ভাণ্ডার । উপকূলবর্তী অঞ্চলকে বছরের পর বছর ধরে উর্বর রেখেছে । একটা পরিণত ম্যানগ্রোভ গাছ বছরে প্রতি এক হেক্টর জমিতে 47 কেজি নাইট্রোজেন , 26 কেজি পটাশিয়াম , 99 কেজি ক্যালশিয়াম , 34 কেজি ম্যাগনেশিয়াম আর 32 কেজি সােডিয়াম সরবরাহ করে । এজন্য এদের বাঁচিয়ে রাখা খুব জরুরি । গাছ তথা অরণ্য ধ্বংস করলে মানুষ শুধু কাঠ পায় । কিন্তু তার ফলে পরিবেশ ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যায় ।


Previous
Next Post »