পরিবেশের সংকট ও দৈহিক স্বাস্থ্য

 পরিবেশের সংকট ও দৈহিক স্বাস্থ্য 

ধাতুর আবিষ্কার ও ব্যবহার শুরু হওয়ার পর থেকে মানুষ নানা প্রয়ােজনে তামা , লােহা , দস্তা , অ্যালুমিনিয়াম , পারদ ও নিকেলের মতাে বহু ধাতু ব্যবহার করেছে । এই সকল ধাতুর নানা অজৈব ও জৈব যৌগ মানুষের দেহে খাদ্য বা পানীয়ের মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশ থেকে প্রবেশ করেছে । আর তা থেকেই নানা রােগ দেখা দিচ্ছে ।


টুকরাে কথা জাপানের সমুদ্রের ধারে এক ছােটো শহর হলাে মিনামাতা । 1908 সালে সেখানে চিসােকর্পোরেশন একটা কারখানা খােলে । ওই কারখানা থেকে পারদ মেশাননা বর্জ্য ক্রমাগত সমুদ্রের জলে মিশতে থাকে । 1930 - এর দশক থেকে দেখা গেল ওখানে বেড়াল ও মানুষ এক অজানা কারণে মারা । যেতে লাগল । 1956 সালে বহু মানুষের দেহে একইরকম উপসর্গ দেখা যেতে লাগল – পেশির খিচুনি , দেহ ধনুকের মতাে বেঁকে যাওয়া , জিভ ও মুখের পেশি অসাড় হয়ে যাওয়া । অনেক বিকলাঙ্গ ও অন্ধ শিশুর জন্ম হলাে । খোঁজখবর করে জানা গেল যে ওই এলাকার আক্রান্ত মানুষজন দীর্ঘদিন ধরে সমুদ্রের মাছ ও কাকড়া খেয়েছেন । আর তার মধ্য দিয়েই বিষাক্ত পারদের যৌগ ওই মানুষদের দেহে প্রবেশ করেছে । আর তা থেকেই এই সংকটের সূচনা ।

সুবীর নস্করের বাড়ি দক্ষিণ 24 পরগণা আর মনোেজ হেমব্রমের বাড়ি বীরভূম জেলায় । দীর্ঘদিন ধরে অন্যদের মতাে ওরাও চামড়া ও দাঁত , হাড়ের সমস্যায় ভুগছে । 

সুবীর নস্করের অসুখ

  1. হাতের ওপরের তালুতে খসখসে উঁচু উঁচু ছােপ । 
  2. চামড়ার রং কালাে । 
  3. বুকে ও পিঠেতে কালাে ছােপ । 
  4. পায়ের নানা জায়গায় ক্ষত । 

মনােজ হেমব্রমের অসুখ  

  1. দাঁতে ছােপ ছােপ দাগ ।
  2. দাঁত ও হাড় প্রায়ই ভেঙে যায় ।  
  3. পিঠ ধনুকের মতাে বেঁকে গেছে । 
  4. চলার সময় হাঁটু দুটি ঠোক্কর খায় । 
সুবীর ও মনােজকে দেখে ডাক্তারবাবুরা বলেছেন আর্সেনিক ও ফ্লুওরাইডের প্রভাবেই নাকি এই ধরনের অসুখ হয় । 
টুকরাে কথা 
পশ্চিমবঙ্গের মালদহ , মুর্শিদাবাদ , উত্তর ও দক্ষিণ 24 পরগণা জেলার মাটির নীচে আর্সেনিকের বেশ কিছু খনিজের একটা স্তর আছে । কৃষিজমিতে সেচ ব্যবস্থার প্রচলনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ প্রচুর পরিমাণে ভূগর্ভের জল নলকূপ দিয়ে তুলতে শুরু করে।নলকূপের মধ্য দিয়ে বায়ুর অক্সিজেন ঢুকতে শুরু করে । ওই অক্সিজেনের সঙ্গে আর্সেনিকের অদ্রাব্য খনিজ বিক্রিয়া করে নানা দ্রাব্য যৌগে পরিণত হতে শুরু করে । ওই যৌগ মেশানাে জল দীর্ঘদিন ধরে পান করলে দেহে সুবীরের অসুখের মতাে অসুখ দেখা যায় । এক লিটার জলে 0.05 মিলিগ্রাম বা তার বেশি মাত্রায় আর্সেনিক থাকলে সেই জল খাওয়া উচিত নয় । পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম , বাঁকুড়া ও মালদহ জেলায় মাটির নীচে ফুওরিনের কিছু খনিজ পদার্থ । আছে । এর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ভূগর্ভস্থ জলে কিছুটা ফ্লুরাইড আয়ন দ্রবীভূত হয় । নলকূপের সাহায্যে ওই জল তুলে দীর্ঘদিন পান করলে মনােজের অসুখের মতাে অসুখ দেখা যায় । এক লিটার পানীয় জলে 1.5 মিলিগ্রামের বেশি ফ্লুওরাইড থাকলে দাঁত ও হাড়ের নানা সমস্যা দেখা দেয় ।
পাশের ছবিগুলাের মতাে এমন পেশায় অসংখ্য মানুষ আজ যুক্ত । দেখা যায় , দীর্ঘদিন ওই পেশায় যুক্ত থাকার পর ওইসব মানুষরা কোনাে না কোনাে রােগে আক্রান্ত হচ্ছেন । তাহলে কী ওপরের ছবির মানুষরাও নানা রােগে আক্রান্ত ? নীচের তালিকায় ওই সকল পেশায় যুক্ত মানুষদের সমস্যাগুলাে লক্ষ করাে । সংশ্লিষ্ট পেশা ও রােগের মধ্যে সমতা বিধান করাে ( একই অসুবিধা / রােগ একাধিক পেশার সঙ্গে যুক্ত হতে পারে ) 

উপরের ছবিতে উল্লিখিত বিভিন্ন পেশা 
1. মােটর গাড়ি চালানাে
2. কারখানায় কাজ করা ।
3. মাটি কাটা
4. ফুটবল খেলা
5. উনুনের সামনে রান্না করা
6. খনিতে কাজ করা
7. মাঠে ধান রােওয়া ও চাষ করা
৪. ল্যাবরেটরিতে কাজ করা ।
 9. মাথায় করে ভারী জিনিস বহন করা
10. মাংস কাটা
11. হাতুড়ি ও ছেনি দিয়ে কাজ করা
12. চাষের জমিতে ফসল কাটা

সংশ্লিষ্ট রােগ  
( ক ) পিঠে ও ঘাড়ে ব্যথা , চোখের সমস্যা  
( খ ) পায়ের পাতার হাড়ে সূক্ষ্ম চিড়  
( গ ) পিঠে ও ঘাড়ে ব্যথা  
( ঘ ) হাড় ভেঙে যাওয়া , কার্টিলেজ ছিড়ে যাওয়া  
( ঙ ) হাঁটু মুচড়ে কার্টিলেজ ছিড়ে যাওয়া  
( চ ) ফুসফুসে কয়লার গুঁড়াে জমে যাওয়া  
( ছ ) পিঠে ও ঘাড়ে ব্যথা 
( ঝ ) হাতে ও ঘাড়ে ব্যথা  
( ঞ ) ঘাড়ে ব্যথা ও চোখের সমস্যা  
( ট ) হাতের সমস্যা  
( ঠ ) ক্যানসার  

পেশাগত রােগের বিভিন্ন কারণ । মানুষ বিভিন্ন ভৌত ও রাসায়নিক পরিবেশের মধ্যে দীর্ঘ সময় থেকে কাজ করে । এ সকল ভৌত ও রাসায়নিক প্রভাবক মানুষের শরীরে নানারকম প্রভাব ফেলে । এবার এসাে দেখি কোন কোন প্রভাবকের জন্য মানুষের শরীরে নানা পেশাগত ব্যাধির সৃষ্টি হয় ।

আদিম মানুষকে শিকার , পশুপালন কিংবা অন্যান্য কাজের প্রয়ােজনে প্রচুর শক্তি ব্যয় করতে হতাে । ফলে রক্তের ফ্যাট বা গ্লুকোজকে অনবরত পােড়াতে হতাে । কিন্তু যন্ত্র যখন থেকে মানুষের নানা কাজে বেশি বেশি করে ব্যবহৃত হতে থাকল পরিশ্রম ততই কমতে থাকল । বহু মানুষ এমন পেশায় যুক্ত হতে থাকলেন যেখানে কায়িক শ্রমের তুলনায় মানসিক শ্রম বেশি । চেয়ার - টেবিলে বসে লেখা , হিসেব - নিকেশ করা , কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করার মতাে পেশায় নিযুক্ত ব্যক্তিদের পেশির সঞ্চালন কম হয় । বিভিন্ন অঙ্গে রক্ত সরবরাহ কমে যায় । এই পেশাগুলিতে নিযুক্ত ব্যক্তিদের রক্তের গ্লুকোজ বা ফ্যাটকে সেভাবে পােড়ানাের দরকার হয় না । অতিরিক্ত গ্লুকোজও ফ্যাট রক্তে ক্রমাগত জমা হতে থাকে । এবার বন্ধুদের , শিক্ষক / শিক্ষিকা বা ডাক্তারবাবুর সঙ্গে আলােচনা করে জানার চেষ্টা করাে এধরনের পেশায় কোন কোন রােগের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায় ।
Previous
Next Post »