পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য হ্রাসের কারণ ?

পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য হ্রাসের কারণ ?


এবার এসাে আমরা জানার চেষ্টা করি আমাদের পৃথিবী গ্রহে জীববৈচিত্র্যের সংখ্যা হ্রাসের পিছনে কী কী কারণ আছে । 

1. হারিয়ে যাচ্ছে বাসস্থান 

প্রকৃতি থেকে জীবদের হারিয়ে যাওয়ার পেছনে একটা বড়াে কারণ হলাে তাদের বাসস্থান ধ্বংস হয়ে যাওয়া । আমাদের ভােগবিলাসের সামগ্রী তৈরির প্রয়ােজনে ( যেমন কাঠের শৌখিন আসবাবপত্র ) , কখনও বা চাষের জমি বাড়ানাের জন্য , আবার কখনও বা থাকার জায়গা বাড়ানাের জন্য জঙ্গলের গাছ কেটে ফেলা হয় । এমনকি পুরাে জঙ্গলও সাফ করে ফেলা হয় । সাইবেরিয়ার বাঘের ( Siberian Tiger ) অস্তিত্ব সংকটের অন্যতম কারণ । হলাে তাদের বাসস্থান ধ্বংস হয়ে যাওয়া । জীবের থাকার জায়গা নানা কারণে ধ্বংস হতে পারে । 

2. অবৈধ শিকার / চোরাশিকার 

চোরাশিকারিদের লোেভ অনেক প্রাণীর অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তুলেছে । পৃথিবীর বেশ কিছু দেশে কিছু কিছু বন্য জন্তুর হাড় , চামড়া ইত্যাদি ওষুধ তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয় । এছাড়াও দাঁত , চামড়া বা শিং এসবের । লােভেও বিভিন্ন প্রাণী চোরাশিকারিদের হাতে প্রাণ হারায় ।

3.পরিবেশে নতুন জীবের আগমন 

বাইরে থেকে আসা নতুন প্রাণী অনেক সময় স্থানীয় প্রাণীদের সংখ্যা হ্রাসের কারণ হয় । যেমন বিংশ শতাব্দীতে । গ্যালাপাগােস দ্বীপপুঞ্জে বাইরে থেকে কুকুর , শুয়াের আর ছাগল নিয়ে আসা । হয়েছিল । এই ছাগলরা কচ্ছপের খাবার যেমন ঘাস , পাতা খেয়ে নিত । আবার কুকুর , শুয়ােরেরা খেত কচ্ছপের ডিম । ফলে একসময় দেখা গেল কচ্ছপের সংখ্যা কমে গেল । গ্রাম বাংলার জলাভূমিতে আফ্রিকা থেকে তেলাপিয়া আর বিশাল মাগুর জাতের মাছ এনে ছেড়ে দেওয়ার ফলে অস্তিত্ব বিপন্ন হয়েছে মৌরলা , পুঁটি , খলসের মতাে স্থানীয় মাছেদের ।

4. জলবায়ুর পরিবর্তন

পরিবর্তন পালটে দিতে পারে জীবের চেনা পরিবেশ । আর কোনাে জীব নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে না পারলে সেই জীবের অস্তিত্ব সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে।বিশ্ব উষায়নের ফলে মেরু অঞ্চলের বরফ দ্রুত গলে যাচ্ছে । আর তার ফলে মেরু ভালুকের অস্তিত্ব আজ বিপন্ন । বরফ গলে যাওয়ার ফলে বিপন্ন হয়ে পড়েছে এম্পারার পেঙ্গুইন , মেরুশিয়ালের মতাে প্রাণীরা । মহাসাগরের জলের অম্লত্ব ও তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে সমস্যায় পড়েছে বিভিন্ন কোরাল বা প্রবালরা । পরিবেশে কার্বন ডাইঅক্সাইডের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে অস্ট্রেলিয়ায় ইউক্যালিপটাস গাছের পাতার খাদ্যগুণ যাচ্ছে কমে । এর ফলে সমস্যায় । পড়ছে অস্ট্রেলিয়ার কোয়ালা ( Koala ) ভালুক - যাদের খাবার এই ইউক্যালিপটাস গাছের পাতা ।

5. পরিবেশ দূষণ 

বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার অনেক সময় ডেকে আনতে পারে জীবের বিনাশ । চাষের জমিতে যথেচ্ছকীটনাশক ব্যবহারের ফলে হারিয়ে গেছে বেশ কিছু শস্যভুক পাখি । এছাড়াও বিভিন্ন শিল্পের বর্জ্য পদার্থ খাল , বিল , নদীর জলে এসে মিশছে । এর ফলে বহু মাছ ও জলজ প্রাণীর মৃত্যু হয় । উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন নদীতে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ এসে পড়ায় প্রচুর মাছের মৃত্যুর খবর হয়তাে তােমরা অনেকে পড়েছ । শিল্প আর কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহার হওয়া বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ গঙ্গায় এসে মেশে।ফলে গঙ্গায় মাছের সংখ্যা খুব কমে গেছে । সেই সঙ্গে বিপন্ন হচ্ছে গঙ্গার শুশুক ( Gangetic Dolphin ) ।

6. অতিরিক্ত অর্থনৈতিক ব্যবহার 

কোনাে বিশেষ উদ্ভিদ বা প্রাণীর অর্থকরী গুরুত্ব যদি খুব বেশি হয় , তবে অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে ওইসব জীবের অস্তিত্ব বিপন্ন হতে পারে । হিমালয়ের কস্তুরী মৃগ ( Musk Deer ) হলাে এরকমই এক প্রাণী । এদের থেকে পাওয়া যায় মৃগনাভি । আর এই মৃগনাভি থেকে তৈরি হয় নানা সুগন্ধি দ্রব্য । মানুষের সুগন্ধি দ্রব্যের প্রতি আকাঙ্খা মেটাতে গিয়ে এই প্রাণীর অস্তিত্ব আজ সংকটের মুখে ।

পৃথিবীতে জীববৈচিত্র্য হ্রাস গত 500 বছরে 784 টি প্রজাতি পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে । যাদের মধ্যে আছে 338 টি মেরুদণ্ডী প্রজাতি , 359 টি অমেরুদণ্ডী প্রজাতি ও 87 টি উদ্ভিদ প্রজাতি । গত 20 বছরেই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে প্রায় 27 টি প্রজাতি । বর্তমানে সারা পৃথিবীতে প্রায় 15,500 টি প্রজাতি ধ্বংসের মুখে ।
Previous
Next Post »