হিমবাহের বরফের গলন ও নদীর জলস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি

 হিমবাহের বরফের গলন ও নদীর জলস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি



 হিমবাহকে বরফের জমাটবাধা নদীবললে বােধহয় খুব একটা ভুল বলা হবে না । কারণ পৃথিবীর মিষ্টিজলের বৃহত্তম ভান্ডার হলাে এই হিমবাহগুলাে । এই হিমবাহগুলাের বরফগলা জলে পুষ্ট হয় বিভিন্ন নদনদী । পৃথিবীর আয় 99 % হিমবাহের অবস্থান উত্তর আর দক্ষিণমেরুতে । হিমালয় পর্বতমালাতেও আছে অনেকগুলাে হিমবাহ । এদের মধ্যে অন্যতম হলাে গঙ্গোত্রী , যমুনােত্রী , জেমু । গঙ্গা , যমুনা , ব্রম্মপুত্র প্রভৃতি নদীর উৎস হলো হিমালয়ের । বিভিন্ন হিমবাহ । হিমবাহের বরফগলা জলেই এরা পুষ্ট হয় । হিমালয় এশিয়ার নয়টি বড়ো বড়ো নদীকে পৃষ্ট করে । এর ফলে প্রায় 120 কোটি লােকের জলের বন্দোবস্ত হয় । 

গশােত্ৰী হিমবাহ 



বৃষ্টিপাত , বায়ুর উম্নতা প্রভৃতি আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদানের পরিবর্তন পৃথিবীর হিমবাহগুলাের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে । পৃথিবীর গড় উন্নতা বেড়ে গেলে হিমবাহগুলাের বরফ বেশি মাত্রায় গলতে আরম্ভ করবে । 

• গঙ্গা নদীর উৎস গঙ্গোত্রী হিমবাহ প্রতি বছর একটু একটু করে ছােটো হয়ে আসছে । 

• উত্তরমেরু সংলগ্ন আলাস্কা উপকূলে যে বরফের স্তর রয়েছে , তা গত 30 বছরে 40 % কমে গিয়ে পাতলা হয়ে গেছে ।

হিমবাহগুলাে গলে যাওয়ার ফলে সমুদ্রের জলতল বেড়ে যেতে পারে । 

• 1993 থেকে 2005 সালের মধ্যে সমুদ্রের জলতল প্রতি বছরে গড়ে বেড়েছে 3 মিমি ( 0.1 ইঞ্চি ) । • পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের হিমবাহগুলাে গলে যাওয়ার প্রভাব পড়বে সমুদ্রের জলতলের ওপর । এই বিষয়ে একটি গবেষণা বলছে যে 2100 সালের মধ্যে সমুদ্রের জলতলের উচ্চতা প্রায় 70 সেমি বেড়ে যেতে পারে । 

সমুদ্রের জলতল বেড়ে গেলে উপকূল অঞ্চলে বন্যার সম্ভাবনা দেখা দেবে । উপকূল অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের মুখে পড়বে । প্রাণহানি ও আর্থিক ক্ষতিরও সম্ভাবনা দেখা দেবে । সমুদ্রের জলতল বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে সারা পৃথিবীতে সমুদ্রের উপকূলে বাস করা অসংখ্য মানুষ । 


যমুনােত্রী হিমবাহ 


ভারত ও বাংলাদেশের অন্তর্গত সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ অঞ্চলও আজ এই বিপদের সম্মুখীন । পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি বাঘের আবাস এই সুন্দরবন । আর এই অঞ্চলে বাস করে প্রায় চল্লিশ লক্ষ মানুষ । এদের সকলেরই অস্তিত্ব আজ সংকটের মুখে ।

 উন্নয়নের ফলে হিমবাহ পুরাে গলে গেলে ভবিষ্যতে ওই হিমবাহের জলে পুষ্ট নদ - নদীর জল প্রথমে বেড়ে যাওয়ার ও পরে কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে । প্রথমে বন্যা আর পরে দেখা দিতে পারে তীব্র জলসংকট ।

হিমবাহ প্রায় ৪০ শতাংশ সূর্য রশ্মি প্রতিফলিত করে আর প্রায় 20 শতাংশ শােষণ করে । হিমবাহ সম্পূর্ণ গুলে । গেলে ওই ৪০ শতাংশ সুর্যরশ্মি ভূভাগ দ্বারা শশাষিত হয়ে পৃথিবীর উম্নতাকে আরও বাড়িয়ে দেবে ।

Previous
Next Post »