বায়ুমণ্ডল ও গাছ ,গাছ ও প্রাণীর নির্ভরশীলতা,গাছ ও খাদ্য - খাদক সম্পর্ক

 বায়ুমণ্ডল ও গাছ । 

সূর্যের আলাে পেলে গাছের সবুজ পাতার পত্ররন্ধ্র খুলে যায় । আর তা দিয়ে প্রবেশ করে কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস । সূর্যের আলাে , জল আর কার্বন ডাইঅক্সাইড কাজে লাগিয়ে গাছ খাদ্য তৈরি করে নিজে পুষ্ট হয় । আজ থেকে প্রায় 350 কোটি বছর আগে , পৃথিবীতে প্রাণ সৃষ্টির প্রথম দিকে , বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ ছিল খুব কম । আনুমানিক 250 কোটি বছর আগে প্রথমে কিছু অণুজীব সালােকসংশ্লেষের মাধ্যমে অক্সিজেন তৈরি করতে শুরু করে । আরাে অনেক পরে গাছ সালােকসংশ্লেষের ফলে প্রচুর  O2, গ্যাস ছাড়তে শুরু করলাে । সালােকসংশ্লেষের সময় অণুজীব ও গাছেরা শশাষণ করতে শুরু করল  CO2 ,। এতে বাতাসের উপাদানের পরিমাণ ধীরে ধীরে বদলে গেল । তবে সবধরনের উদ্ভিদের  CO2 , শশাষণ ক্ষমতা সমান নয় । 


টুকরাে কথা 

কানাডার সরলবর্গীয় প্রাচীন বনভূমিতে খুব কম পরিমাণে  CO2 , শশাষিত হয় । নিরক্ষীয় অঞ্চলে একই ঘটনা ঘটে । কিন্তু ইউরােপ , চিন বা সাইবেরিয়ার নতুন তৈরি বনভূমিতে ঠিক তার বিপরীত ঘটনা ঘটে । বায়ুতে  CO2 , -এর ঘনত্ব যত বাড়ছে এসব অরণ্যের গাছরাও অতিরিক্ত  CO2 , শশাষণের জন্য নিজেদের বদলে নিচ্ছে । বিদেশে ওক , বার্চ কিংবা মেপল গাছে শীতের শেষে নতুন পাতা গজানাের সময় প্রায় 20-25 দিন এগিয়ে | এসেছে । আর শেষপাতা ঝরে পড়ার সময়ও প্রায় 10-12 দিন পিছিয়ে গেছে । ফলে এরা আরও বেশিদিন ধরে  CO2, শােষণ করতে পারছে । 

যে পাতার ক্ষেত্রফল যত বেশি তার  CO2 , গ্যাস শােষণের হার তত বেশি । নীচের গাছগুলাের মধ্যে কোন কোন গাছের পাতা একটা নির্দিষ্ট সময়ে বেশি  CO2 , গ্যাস বাতাস থেকে নিতে পারে বলে তুমি মনে করাে ? ( তেঁতুল , শাল , কাঠাল , ধান , আখ , আলু , বট , কদম , ছাতিম , পাইন , গরান , ঘাস )

গাছ ও প্রাণীর নির্ভরশীলতা 

পৃথিবীতে মােট জীবের প্রায় 99 % হলাে উদ্ভিদ । আর মাত্র 1 % হলাে প্রাণী । সবুজ গাছপালা খাদ্যে যে পরিমাণ শক্তি জমিয়ে রাখে , তার 10-20 % শক্তি প্রাণীদের বাঁচিয়ে রাখতে ব্যয় হয় । অরণ্য যদি কমতে থাকে তাহলে এসব প্রাণীর বেঁচে থাকার শক্তিতেই টান পড়বে । আজকের পৃথিবীতে প্রায় সাড়ে তিন লাখ জাতের উদ্ভিদবৈচিত্র্য দেখা যায় । আর প্রাণীবৈচিত্র্য হলাে প্রায় দশ লাখের মতাে । এর মধ্যে প্রায় সাত লাখ প্রাণীর খাদ্য হলাে গাছপালার নানা অংশ বা সম্পূর্ণ গাছ ।

গাছ ও খাদ্য - খাদক সম্পর্ক 

অরণ্যে সূর্যের আলাে ব্যবহার করে উদ্ভিদ খাদ্য তৈরি করে । আর নানা অঙ্গে তারা খাদ্য সঞ্চয় করে । এই । সঞ্চিত খাদ্য নানা প্রাণী ব্যবহার করে । তাই অরণ্যে উদ্ভিদরা হলাে উৎপাদক আর প্রাণীরা হলাে খাদক । খাদ্য - খাদকের এই সম্পর্কটাই হলাে খাদ্যশৃঙ্খল । অরণ্য যতাে বড়াে হয় , অরণ্যে গাছপালার যত বৈচিত্র্য বাড়ে । তত নতুন নতুন খাদ্যশৃঙ্খল তৈরি হয় । আর একটা খাদ্যশৃঙ্খল অন্যান্য খাদ্যশৃঙ্খলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হয়ে । তৈরি করে খাদ্যজাল ।

Previous
Next Post »