প্লেগ - ব্ল্যাক ডেথ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা

 প্লেগ - ব্ল্যাক ডেথ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা

Ring - a - ring of roses , A pocket full of posies , A - tishoo ! A - tishoo ! We all fall down .

এইরকম একটা ছড়া তােমরা অনেকে হয়তাে শুনেছে । কিন্তু তােমরা কী জানাে যে ওই ছড়াটা লন্ডনের চতুর্দশ শতাব্দীর প্লেগ মহামারিকে উপলক্ষ করে লেখা হয়েছিল প্লেগ তার ধ্বংসাত্মক মারণলীলার জন্য সে দেশে ব্ল্যাক ডেথ নামে বেশি পরিচিত । ঠিক যেমন যক্ষ্মাকে একসময় ডাকা হতাে হােয়াইট ডেথ নামে । কিন্তু ব্ল্যাক কেন ? কারণ আর কিছুই নয় , প্লেগে আক্রান্ত ব্যক্তির সারা গায়ে কালাে কালাে ছােপ দেখা যায় । কিন্তু নানাধরনের প্রাণীর মাধ্যমে ছড়ানাে রােগের কথা বলতে বলতে হঠাৎ প্লেগের কথা কেন ? তােমরা নিশ্চয়ই আন্দাজ করতে পারছ যে কোনাে একটা প্রাণী নিশ্চয়ই এই রােগ ছড়ানােয় সাহায্য করে । কে বলত ? ইদুর । প্লেগ এত মারাত্মক যে 541-542 খ্রিস্টাব্দে 10 কোটি মানুষের প্রাণ নিয়েছিল প্লেগ । আর 541 থেকে 700 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ইউরােপের জনসংখ্যা হ্রাস পায় 50 শতাংশ । ভারতবর্যও প্লেগের আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পায়নি । অতীতে প্লেগের জীবাণুর আক্রমণে ভারতেও বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে । বারবার আক্রমণ করলেও প্লেগ কিন্তু ইউরােপের মাটিতে চিরকালের জন্য থেকে যেতে পারেনি । কারণ প্লেগের অন্যতম বাহক , মেঠো কালাে ইদুর শীতের দেশের বাসিন্দা নয় । বিষুবরেখার আশেপাশের দেশে এদের বাস । মানুষের সঙ্গে এদের পরিচয় প্রায় ৪ থেকে 10 হাজার বছর আগে মানুষ যখন প্রথম চাষবাস করতে শিখেছিল তখন থেকে । উর্বর মাটিকে শস্য উৎপাদনের কাজে লাগিয়েছিল মানুষ । নিয়মিত খাবারের জোগান পাবার আশায় ক্ষেতের মাটির তলায় আশ্রয় নিয়েছিল কালাে মেঠো ইঁদুরের দল । এই মেঠো ইদুরের চামড়ায় বাসা বাঁধে এক ধরনের উকুন । আর প্লেগের জীবাণু আশ্রয় নেয় এই উকুনের পাকস্থলীতে । 

কিন্তু কীভাবে ছড়ায় এই প্লেগ ? 

এই জীবাণুগুলাে খুব তাড়াতাড়ি সংখ্যায় বেড়ে ইদুরের উকুনের ( Rat flea ) পাকস্থলীর রাস্তা বন্ধ করে দেয় । ফলে উকুনটা অনাহারে , খিদের জ্বালায় থাকে সামনে পায় , তাকেই কামড়ায় । আর সেই ক্ষতস্থানে প্লেগের জীবাণু বমি করে দেয় । সেই ক্ষতস্থান থেকে প্লেগের সংক্রমণ ঘটে । ইঁদুরের উকুন ইদুরকে কামড়ালে ইঁদুরে , আর মানুষকে কামড়ালে মানুষে প্লেগের সংক্রমণ হয় । বস্তাবন্দি চাল , গম , আলুর সঙ্গে প্লেগের মেঠো ইঁদুর গ্রাম থেকে পৌঁছােয় শহরে । আর বন্দর থেকে জাহাজে করে দূরদুরান্তের দেশে পাড়ি দেয় । আর ইদুরের এই দেশ থেকে দেশান্তরে পাড়ি দেওয়ার পথ ধরেই ছড়িয়েছে প্লেগ । একবার নয় , বারবার । 

1899 সালে কলকাতায় প্লেগ মহামারির আকার ধারণ করে । প্রতিদিনই বহু মানুষ মারা যেতে থাকেন । এইসব দেখে ভগিনী নিবেদিতা আর স্থির থাকতে পারেননি । তিনি নিজের হাতে রাস্তাঘাট , নর্দমা পরিষ্কার রার দায়িত্ব তুলে নেন । প্লেগে আক্রান্ত মানুষদের নিজের হাতে সেবা করতে থাকেন । তাঁর এই কাজে উদ্বুদ্ধ হয়ে যুবসমাজও তাঁর পাশে এসে দাঁড়ায় । প্লেগের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ভগিনী নিবেদিতা একটা কমিটি তৈরি করেন । কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে গিয়ে এই সমাজসেবকরা প্লেগের রােগীদের সেবা শুশ্রুষার দায়িত্ব নিজেদের হাতে তুলে নেন ।

Previous
Next Post »